আচমকা লাদাখে “নরেন্দ্র মোদী”

দুর্বলেরা নয়, শান্তির কথা বলতে পারেন বীরেরাই। শুক্রবার আচমকা লাদাখ পরিদর্শনে গিয়ে এই কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভারতীয় সেনাদের তিনি ‘দেশের মাটির বীর সেনা’ বলে উল্লেখ করেন। সেনাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের রাগ এবং বীরত্ব শত্র‌ুরা দেখে নিয়েছে।’ লাদাখে সেনা বাহিনীর কাছে এই বক্তব্য রেখে প্রধানমন্ত্রী চিনের প্রতি কড়া ও প্রত্যক্ষ বার্তা পাঠালেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল।
Read More News

শুক্রবার ১১,০০০ ফিট উচ্চতায় লেহ-তে গিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী, বায়ুসেনা ও আইটিবিপি জওয়ানদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। মোদী বলেন, ‘ভারতীয় সেনার সাহস ও দেশমাতৃকার প্রতি তাঁদের আত্মনিবেদনের কোনও তুলনা হয় না। দেশের মধ্যে এবং দেশের বাইরে বসবাসকারী প্রত্যেক ভারতীয় এই কথা বিশ্বাস করেন যে আপনারা দেশকে সুরক্ষিত রাখতে সক্ষম। আপনারা যে উচ্চতায় রয়েছেন, আপনাদের সাহসের উচ্চতা তার চেয়েও অনেক বেশি। যে পাহাড় আপনাদের ঘিরে রেখেছে, আপনাদের হাত তার থেকেও শক্ত। আপনাদের আত্মবিশ্বাস এবং আত্মনিবেদন অটল হয়ে বিরাজ করছে।’

মোদী আরও বলেন, ‘যে প্রাকৃতিক পরিবেশে আপনারা এই অসম সাহসের পরিচয় দিচ্ছেন, তা সারা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন। আপনারা বারবার প্রমাণ করেছেন যে ভারতীয় সেনাবাহিনীই পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে সাহসী এবং ক্ষমতাশালী।’ শুক্রবার সকালে যখন তিনি নিমু পৌঁছন তখন প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে ‘বন্দেমাতরম’ এবং ‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগান ওঠে।

প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে ধরে সেনাদের উচ্ছ্বাস প্রকাশের ভিডিয়ো প্রকাশিত হয়েছে। মোদীর সঙ্গে লাদাখ পৌঁছন চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াত এবং সেনা প্রধান জেনারেল এমএম নারাভানে। চপারে করে ১১,০০০ ফুট উচ্চতায় নিমুতে পৌঁছন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে একটি ক্যামোফ্লেজ টেন্টে বসে সেনাদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। আর্মি ছাড়াও সেখানে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় বায়ুসেনা এবং ইন্দো-টিবেটান বর্ডার পুলিশও।

শুক্রবার লাদাখ সফরে যাওয়ার কথা ছিল প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর। কিন্তু, শেষ মুহূর্তে সফর স্থগিত করে দেওয়া হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে সামরিক শক্তিবৃদ্ধিতে খামতি রাখতে চাইছে না নয়াদিল্লি। বৃহস্পতিবার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন ডিফেন্স অ্যাকুইজিশন কাউন্সিলের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ২১টি ‘মিগ-২৯’ এবং ১২টি ‘সুখোই- ৩০’ যুদ্ধবিমান কিনবে দেশ। রাশিয়া থেকে কেনা হবে সুখোই আর মিগ নির্মাণের বরাত দেওয়া হবে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হ্যালকে৷ পাশাপাশি চলবে ৫৯টি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমানের আধুনিকীকরণের কাজও। এই দায়িত্ব হ্যালকেই দেওয়া হচ্ছে

লাদাখ পৌঁছলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। লেহ সামরিক ঘাঁটিতে প্রধানমন্ত্রীর অবতরণের খবর সকাল ১০টা নাগাদ এসেছে। কিন্তু তিনি যে এ দিন লাদাখ যেতে পারেন, এমন কোনও খবর আগে থেকে ছিল না।

প্রধানমন্ত্রীর দফতর বা প্রতিরক্ষা মন্ত্রক, কারও তরফ থেকেই আগে জানানো হয়নি যে, প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজে আজ লাদাখ যেতে পারেন। গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের লাদাখ সফরের কথা ছিল। সে সফর শেষ মুহূর্তে বাতিল হয়। কেন বাতিল, স্পষ্ট জানায়নি দিল্লি। কিন্তু প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করেছিলেন, চিনের সঙ্গে আলোচনার প্রক্রিয়া এগোচ্ছে বলেই রাজনাথের সফর স্থগিত করা হল। ভারত যে এখন সঙ্ঘাত চাইছে না, বরং পরিস্থিতি প্রশমিত হয়ে এলে সামরিক তৎপরতা কমানোই যে ভারতের লক্ষ্য, রাজনাথের সফর স্থগিত করে সেই বার্তাই দেওয়া হল বলে কেউ কেউ ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। কিন্তু শুক্রবার সকালে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, আরও অনেক বড় বার্তা চিনকে দেওয়ার ছিল বলেই বৃহস্পতিবার রাজনাথের সফর স্থগিত হয়েছিল।

তার মাঝেই আচমকা প্রধানমন্ত্রী মোদী লাদাখ পৌঁছনোয় ভারতের কৌশলগত বার্তাই বদলে গেল বলে মনে করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই সীমান্ত সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদরা। পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর না হলে বা খুব বড় পদক্ষেপের কথা ভাবা না হলে প্রধানমন্ত্রী নিজে সীমান্ত চৌকিতে যান না। সুতরাং প্রধানমন্ত্রীর এই আচমকা সীমান্ত সফর বাহিনীর মনোবল অনেকটা বাড়িয়ে দেবে বলে দাবি করছেন প্রাক্তন সেনাকর্তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *