জনসংখ্যার চাপ বাড়ছেই

অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে ঢাকামুখী জনসংখ্যার চাপ। গ্রামাঞ্চলের তুলনায় নগরীতে কর্মসংস্থান এবং নাগরিক সুবিধা বেশি থাকায় দিন দিন উদ্বেগজনক হারে বেড়েই চলেছে রাজধানীর লোকসংখ্যা। গ্রাম থেকে মানুষের ঢাকায় আসা কমাতে বা বন্ধ করতে চাইলে ব্যাপকভিত্তিক বিকেন্দ্রীকরণের পাশাপাশি গ্রামে কর্মসংস্থান ও নাগরিক সুবিধাদি সহজলভ্য করার বিকল্প নেই বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের।

জানা যায়, জনবহুল শহরের তালিকায় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অবস্থান চতুর্থ। ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ জানাচ্ছে, ঢাকার বর্তমান জনসংখ্যা ২ কোটি ৩৯ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি। বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা অন্যতম। রাজধানীতে মানুষের বসবাসের সংখ্যাও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। ২০১৮ সালেও ঢাকা ছিল এই তালিকার ৭ নম্বরে। ৬ বছরের ব্যবধানে এখন ৪ নম্বরে। ঢাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ৩ শতাংশেরও বেশি। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ ঢাকামুখী হয়েছে।
Read More News

বিশ্বের যেসব মহানগরীর জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে ঢাকা তার মধ্যে অন্যতম। প্রতিদিন নতুন করে ঢাকার বাসিন্দা হিসেবে যোগ হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ জন। প্রতি মাসে এ শহরের জনসংখ্যা বাড়ছে ৫১ হাজার, বছরে ৬ লাখেরও বেশি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাজধানীতে প্রতি একরে ৭০০ থেকে ৮০০ মানুষের বসবাস। কিন্তু এ নগরীর চারটি এলাকা বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ। এ চারটি এলাকা হচ্ছে লালবাগ, বংশাল, গেন্ডারিয়া ও সবুজবাগ। এসব এলাকায় প্রতি একরে বাস করে প্রায় ৮০০ মানুষ।

অথচ মেগাসিটির মানদন্ড অনুযায়ী প্রতি একর আয়তনে জনসংখ্যা থাকার কথা ১২০ জন। গত ৫০ বছরে ঢাকার ভৌগোলিক আয়তন ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হলেও স্বাধীনতার আগে যেখানে এ নগরে কয়েক লাখ লোক বসবাস করত, সেখানে এখন লোকসংখ্যা ২ কোটির ওপর। কিন্তু সেই তুলনায় সেবা ও অন্যান্য সুযোগসুবিধা অপ্রতুল। গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ ও পরিবহন সংকট এবং সেই সঙ্গে জলাবদ্ধতার সমস্যা নগরজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের গুরুত্বপূর্ণ সব অফিস-আদালত, শিল্পকারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ইত্যাদি গড়ে উঠেছে রাজধানী ঢাকাকে কেন্দ্র করে। ফলে তৈরি হয়েছে অসংখ্য কর্মসংস্থানের। জীবিকা ও প্রয়োজনের তাগিদে এবং শহুরে জীবনের টানে মানুষ রাজধানীমুখী হতে বাধ্য হচ্ছে। রাজধানীর ওপর থেকে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ কমাতে হলে রাজধানীকে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনামাফিক গড়ে তুলতে হবে। গ্রামাঞ্চল এবং ছোট শহরগুলোতে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ-গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরনের শিল্পের বিস্তার ঘটিয়ে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারলে রাজধানীর ওপর অতিরিক্ত জনংসখ্যার চাপ স্বাভাবিকভাবে কমে আসবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *