নারী কেন নিরাপদ নয়?

আমাদের দেশে প্রতিদিন কত নারী যে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, তার সঠিক হিসাব না থাকলেও এটা নিশ্চিত যে, নারীর প্রতি নির্যাতন বেড়ে প্রতিদিনই সহিংসতা ঘটছে। নির্যাতনের শিকার অনেক নারী বাধ্য হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। ১৯৮১ সালে লাতিন আমেরিকায় নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধবিষয়ক এক সম্মেলনে প্রতি বছর ২৫ নভেম্বর ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস’ পালনের ঘোষণা দেয়া হয়। দিবসটি স্বীকৃতি পায় ১৯৯৩ সালে বিশ্ব মানবাধিকার সম্মেলনে। ১৯৯৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর জাতিসঙ্ঘ দিবসটি পালনের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়। প্রতি বছরের মতো এবারো বাংলাদেশে পালিত হয়েছে এ দিবস।
Read More News

বিভিন্ন আইন থাকা সত্ত্বেও নারী ঘরে বাইরে নিরাপদ হতে পারেনি এ পদশে। বন্ধ হয়নি নারী নির্যাতন। এসিড সন্ত্রাস, যৌন নির্যাতন, ইভটিজিং, যৌতুক, ধর্ষণ বা এর চেষ্টা, পারিবারিক সহিংসতা, অপহরণ ও পর্নোগ্রাফি ইত্যাদির মাধ্যমে তারা প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার। জাতিসঙ্ঘের তথ্য মতে, বিশ্বের ৩৫ শতাংশ নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশের ৮৭ শতাংশ বিবাহিত নারীই আপন গৃহে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ শারীরিক নির্যাতন, ৬ শতাংশ যৌন নির্যাতন, ৮২ শতাংশ মানসিক ও ৫৩ শতাংশ অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার।
গত পাঁচ বছরে দৃশ্যত সংখ্যা কমলেও নির্যাতনের ভয়াবহতা বেড়েছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এবং মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পৃথক প্রতিবেদনে এ চিত্র পাওয়া যায়। নারী নির্যাতনের অনেক ঘটনা থানা-পুলিশ পর্যন্ত পৌঁছায় না। মহিলা পরিষদ ১৪টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার তথ্যের ভিত্তিতে জানায়, ২০১১ সালে নির্যাতনের ঘটনা ছিল ছয় হাজার ৬১৬, ২০১২ সালে পাঁচ হাজার ৬১৬, ২০১৩ সালে চার হাজার ৭৭৭, ২০১৪ সালে চার হাজার ৬৫৪টি এবং ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নির্যাতনে এ সংখ্যা তিন হাজার ৩৩৬টি। ২০০৮ সালে নারী নির্যাতনের ঘটনা যেখানে ছিল তিন হাজার ১৫০টি, ২০১১ সালে তা দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়ায় ছয় হাজার ৬১৬টি।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার বিষয়ে বিগত পাঁচ বছরের যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে ২০১২ সালে দুই হাজার ৮৪৪টি, ২০১৩ সালে দুই হাজার ১১৭টি, ২০১৪ সালে এক হাজার ৮৯৩টি এবং ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক হাজার ৪৭৮টি সহিংসতার তথ্য পাওয়া যায়। খবরের কাগজের পাশাপাশি থানা বা পুলিশ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নারী নির্যাতনের তথ্য সংগ্রহ করলে আরো বিশদ চিত্র পাওয়া যেত। মোট কথা, নারী নির্যাতনের মাত্রা বা ভয়াবহতা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে।
২০১৫ সালের পয়লা বৈশাখ বর্ষবরণের দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় অনেক তরুণী চরম নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। তা ছাড়া, গারো তরুণীকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ করায় দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। গাজীপুরের মেয়ে শিউলির চোখ খুঁচিয়ে তুলে অন্ধ করে দিয়েছে তার স্বামী। কালীগঞ্জের মেয়ে তাপসীকে স্বামী আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। মাদারীপুরের গৃহবধূ সালমা দেবরের রামদার আঘাতে হারিয়েছেন দুই পা। ফরিদপুরের শারমিনকে যৌতুকের জন্য মারধর করে মুখে বিষ ঢেলে হত্যা করে স্বামী-শাশুড়ি। টঙ্গীর গৃহবধূ শিউলির দুই চোখ চাকু দিয়ে খুঁচিয়ে তুলে ফেলেছে পাষণ্ড স্বামী। জমি-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য গাজীপুরে পাষণ্ড মামা ঘুমিয়ে থাকা ভাগ্নিকে কিলারের সহযোগিতায় নিজেই গলা কেটে হত্যা করেছে। রাজশাহীতে ১০ লাখ টাকা যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয় বর্বর স্বামী। ফতুল্লায় স্বামী ও সতীনের সহযোগিতায় প্রথম স্ত্রীকে হত্যার পর লাশ গুমের চেষ্টা করেছে। ময়মনসিংহ শহরে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র নাদিরাকে ফুফাতো ভাই তুলে নিয়ে গাড়িতে গলা কেটে হত্যা করে। গাজীপুরে পাষাণ স্বামী পরকীয়ায় বাধা দেয়ায় স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। তাদের দুই পুত্র সন্তান রয়েছে। ময়মনসিংহের ভালুকায় যৌতুকের জন্য স্ত্রীর চোখ তুলে নিয়েছে স্বামী। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে পাঁচ বছরের শিশুকে। এটা শুধু নভেম্বর মাসের পরিসংখ্যান। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে গৃহকর্মীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে লাশ পুকুরে ফেলে দেয়া হয়। আশুলিয়ায় এক নারীর সাত টুকরো লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। থানার অদূরে থেকে প্রথমে তার মস্তক ও একটি পা উদ্ধার করা হয়। দুই হাত, এক পাসহ নিহতের শরীরের বাকি অংশ উদ্ধার করা হয় পরে। জুলাই মাসে পাষণ্ড স্বামীসহ তার পরিবারের সদস্যরা প্লাস দিয়ে সাভারের গৃহবধূর দু’চোখই তুলে ফেলে। গত বছর আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে এক পাষণ্ড স্বামী তরুণী গৃহবধূর কব্জি কেটে নিয়েছিল। স্বামীর কবল থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাধীনভাবে জীবন ও জীবিকা নির্বাহের চেষ্টাই ছিল তার ‘অপরাধ’। ২০১১ সালের জুলাইয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রুমানা মঞ্জুর তার স্বামীর আক্রোশের শিকার হয়ে দৃষ্টিশক্তি হারান।
নির্যাতনের ঘটনা সমাজে অহরহ ঘটে যাচ্ছে যার অনেক ঘটনাই লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে যায়। মূল্যবোধের অবক্ষয়, বিকারগ্রস্ত রুচি, পরমতসহিষ্ণুতার অভাব, মাদকাসক্তি ও ধৈর্য লোপ পাওয়া ইত্যাদি কারণে মানুষ সহিংস হয়ে উঠছে। আইনের যথাযথ প্রয়োগে এ প্রবণতা দূর করতে হবে, যাতে কেউ এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি করার সাহস না পায়।
মহিলা পরিষদের প্রতিবেদন মতে, ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে দেশে মোট ৪৫৪ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত এক মাসে দেশে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১০৩টি। তন্মধ্যে গণধর্ষণের শিকার ২০ জন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ছয়জনকে। ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ১৩ নারী ও কন্যাশিশুকে। এ সময় শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছে সাতজন। যৌন নির্যাতনের শিকার ২১ জন। একই সময় এসিড দগ্ধের শিকার হয়েছেন একজন। অপহরণ করা হয়েছে ১৮ নারীকে। দুইজন নারী ও কন্যাশিশুকে পাচার করা হয়েছে। তন্মধ্যে পতিতালয়ে বিক্রি করা হয়েছে একজনকে। বিভিন্ন কারণে ১০৫ নারী ও কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে। যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার ২৮ নারী। এদের মধ্যে যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয়েছে ১৩ জনকে। উত্ত্যক্ত করা হয়েছে ১৩ জন নারী ও কন্যাশিশুকে। উত্ত্যক্ত হয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন তিনজন। একই সময়ে নির্যাতনের কারণে ৪২ জন আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন এবং ২৫ জনের রহস্যজনক মৃত্যু ঘটেছে। বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে ১৪ জন কন্যাশিশু। শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে ৪১ জন নারীকে। নভেম্বর মাসে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সাড়ে চার শ’ নারী। তবে প্রকৃত ঘটনা আরো বেশি। লোকলজ্জার কারণে অনেক ঘটনাই থেকে যায় চোখের আড়ালে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নারীরা মানসম্মানের ভয়ে যৌন হয়রানির ঘটনা নীরবে মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। আইনের ফাঁক ও দীর্ঘসূত্রতার কারণে অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। ওদের দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য মতে, ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৯১ জন। তাদের মধ্যে ৯ জন আত্মহত্যা করেছেন। একই সময় ধর্ষণের ঘটনা ৬৬৭টি। পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালের আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় ছয় হাজার ৭৭টি মামলা হয়েছে। ঢাকাতেই ঘটেছে ৪৬৪টি ঘটনা। প্রতি মাসে গড়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা হয়েছে দুই হাজার ২৬টি। পুলিশ সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের অক্টোবরে সারা দেশে এক হাজার ৯৯১টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ঢাকায় মামলা হয় ১৫২টি। সেপ্টেম্বর মাসে সারা দেশে যথাক্রমে এক হাজার ৮৮৫ ও ঢাকায় ১৫৩টি মামলা হয়েছে। আর আগস্টে দেশে যথাক্রমে দুই হাজার ২০১টি ও ঢাকায় ১৫৯টি মামলা হয়েছিল।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে ৮৭ শতাংশ নারী স্বামীর হাতে নিগৃহীত। ‘ইউএন উইমেন’ অনুযায়ী ১৫ থেকে ৪৪ বছর পর্যন্ত নারী ও মেয়েশিশুদের ক্ষেত্রে সমষ্টিগতভাবে রোগ, সড়ক দুর্ঘটনা, ম্যালেরিয়া এবং যুদ্ধের কারণে মৃত্যুর চেয়েও নারীর প্রতি সহিংসতা বেশি মৃত্যু ও শারীরিক অক্ষমতার কারণ।
জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির দেয়া তথ্যানুযায়ী, ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে ৫ শতাংশ। গত বছর আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে ধর্ষণের ঘটনাও। ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৩৫ শতাংশ বেশি। বৃদ্ধি পেয়েছে যৌতুকের কারণে নির্যাতন ও যৌন হয়রানি।
তাদের দেয়া তথ্যানুযায়ী, ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে যৌতুকের কারণে নির্যাতন বেড়েছে ২৮ শতাংশ, যৌন হয়রানি ২৪ শতাংশ এবং অপহরণ ৭ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৪ সালের তুলনায় নারী ও শিশু পাচার কমেছে ৭০ শতাংশ এবং নিখোঁজ হওয়া হ্রাস পেয়েছে ৫১ শতাংশ। ২০১৫ সালে এক হাজার ৮৪৭ জন নারী ও শিশুকে হত্যা করা হয়েছে এবং সহিংসতার শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছে ৩০১ জন। ২০১৫ সালে ৯৯৬ জন নারী ও শিশু পারিবারিক সহিংসতার শিকার। এর ৪৮ শতাংশ নারী। গড়ে প্রতিদিন ১৫ এর অধিক নারী ও শিশু নির্যাতনের খবর প্রকাশিত হলেও এর মাত্র এক-তৃতীয়াংশ ঘটনায় মামলা হয়েছে। অনেক ঘটনা থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়ায় না।
‘নারীর প্রতি সহিংসতা রুখতে আমাদের এগিয়ে এসে পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ব্যাপারে সুশীলসমাজের অংশীদারিত্ব জরুরি।’ ২০১৫ সালের ৮ ডিসেম্বর গণমাধ্যমে বাংলাদেশে নিযুক্ত ৯ জন নারী রাষ্ট্রদূতের এক যুক্ত নিবন্ধে এ আহ্বান জানানো হয়। যুক্ত নিবন্ধটি লিখেছেন- রাজকীয় ভুটান দূতাবাসের পেমা শোডেন, ব্রাজিলের ওযানজা ক্যাম্পেস দ্য নব্রেগা, ডেনমার্কের হ্যান ফুগল এস্কেয়ার, ফ্র্যান্সের সোফি অবেয়ার, মালয়েশিয়ার ম্যাডাম নোরলিন বিন্তি ওসমান, নেদারল্যান্ডসের লিওনি মার্গারিটা কুয়েলে নায়ের, নরওয়ের মেরেটে লুন্ডিমো, শ্রীলঙ্কার ইয়াসোজা গুনাসেকেরা ও যুক্তরাষ্ট্রের মার্শা বার্নিকাট।
ঘরে-বাইরে পথে-ঘাটে সব জায়গায় নারী নিগৃহীত। অপরাধীকে শাস্তি দিয়ে জনসম্মুখে আনা দরকার। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মামলার নিষ্পত্তি করে অপরাধীর কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সমাজকে এগিয়ে নিতে হলে এগিয়ে আসতে হবে নারীদের। অধিকার সম্পর্কে নারীরা যত সচেতন হবে, তত দূর হবে সমাজের অন্ধকার। নারী ন্যায্য ও সমান সুযোগ থেকে এখন বঞ্চিত।
২০১৫ সালের ৪ ডিসেম্বর শুক্রবার ছুটির দিন মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী একটি বাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী চালকের সহকারীর হাতে লাঞ্ছনার শিকার হওয়ার পর প্রতিবাদী হয়ে অপরাধীর নাম সংগ্রহ করে থানায় গিয়ে অভিযোগ করেছেন। তা এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে অনেক নারীকে অনুপ্রাণিত করবে। বাসে প্রায়ই নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও অনেকে লোক লজ্জায় প্রতিবাদ করেন না। আবার কোনো নারী প্রতিবাদ করলে কেউ এগিয়ে আসেন না। কারো সহযোগিতা বা প্রতিকার পান না বলে অনেক সময় নারীরা মানসম্মানের ভয়ে নির্যাতনের ঘটনা নীরবে মেনে নিতে বাধ্য হন।
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ করতে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করে সামাজিক সচেতনতা ও নৈতিক শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে। আমাদের সামাজিক অবকাঠামো নারী নির্যাতনের অন্যতম কারণ। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে অপরাধীরা সাজা পায় না। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি বা বিচার হলে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিও পাল্টাবে। নারী নির্যাতন রোধে চাই কঠোর প্রতিবাদ, আন্দোলন। নির্যাতনকারীদের শনাক্ত, প্রতিরোধ ও বিচার দাবিতে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনকে সোচ্চার থাকতে হবে। প্রতিটি ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তির শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অপরাধীর দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়াতে দুর্বৃত্তদের সাহস ক্রমেই বেড়ে যায়। পুলিশের কঠোর ভূমিকা প্রয়োজন। নারী নির্যাতন রোধে প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা দায়িত্বশীল, আন্তরিক, আইনানুগ ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবেন এমনটাই প্রত্যাশা সবার। আইনের যথাযথ প্রয়োগের পাশাপাশি নির্যাতন রোধে পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সমাজের সর্বক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা দরকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *