বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে বিরূপ মন্তব্যকারীদের গ্রেফতারে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের আল্টিমেটাম

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গায় নিক্ষেপের হুমকি দানকারী হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের আল্টিমেটাম দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।

আজ শনিবার বিকেল ৪টায় রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে চারদিকের রাস্তা আটকে দেয় বিক্ষোভকারীরা। প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থানের পর সাত দফা দাবি দিয়ে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

এর আগে, বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হয়ে শাহবাগ মোড়ে আসে বিক্ষোভকারীরা। এতে অংশ নেয় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয়, মহানগর ও নায়ায়ণগঞ্জ শাখার প্রায় তিন হাজার অধিক নেতাকর্মী। সেখানে ট্রাকের উপরে একটি অস্থায়ী মঞ্চও তৈরি করা হয়। সমাবেশে বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, সাধারণ সম্পাদক আল মামুন, ঢাবি শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ প্রমুখ।
Read More News

সমাবেশে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, ‘মহানবী (সা:) ও বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করার অপরাধে আজ থেকে সমগ্র বাংলাদেশে ধর্ম ব্যবসায়ী মামুনুল হক ও ফয়জুল করীমকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলো মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। এদেরকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে। অন্যথায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ সমগ্র দেশে আরো কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে।’

আল মামুন আরো বলেন, ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করা প্রত্যেকটি মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। ধর্মীয় সভাগুলোতে মামুনুল-ফয়জুলরা অন্যধর্মের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত উসকানিমূলক অপপ্রচার চালিয়ে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে। পবিত্র মসজিদ ও মাদ্রাসাগুলোতে এরা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর চেষ্টা চালাচ্ছে যা সম্পূর্ণ ইসলামবিরোধী। ইসলাম ধর্মবিরোধী কর্মকাণ্ড কখনোই বরদাশত করবে না মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।

সমাবেশে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ সাত দফা দাবি উত্থাপনের পাশাপাশি কর্মসূচিও ঘোষণা করে। নতুন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- আগামী ১ ডিসেম্বর বিকেল ৩টায় সারা দেশে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের উদ্যোগে সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ।

সাত দফা দাবির মধ্যে রয়েছে-

মহানবী (সা:) কে অবমাননা ও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করার অপরাধে ধর্ম ব্যবসায়ী মামুনুল হক ও ফয়জুল করিমকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জেলা, উপজেলায় বঙ্গবন্ধুর ভার্স্কয নির্মাণ করতে হবে।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশে অবিলম্বে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে এবং পবিত্র মসজিদ-মাদ্রাসাগুলোতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা বন্ধ করতে হবে।

বিভিন্ন ধর্মীয় সভা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্মীয় উসকানিমূলক গুজব ছড়ানো ও অপপ্রচারকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

ধর্ষণের মতো বলাৎকারের অপরাধে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করতে হবে।

মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। মাদরাসা শিক্ষার্থীদের ওপর যৌন নিপীড়ন বন্ধে মনিটরিং সেল গঠন করে নজরদারি বাড়াতে হবে।

সব মাদরাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়মিত জাতীয় সংগীত বাজানো, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, শহিদ মিনার নির্মাণ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানানো বাধ্যতামূলক করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।

শনিবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীতে প্রয়াত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের স্মরণসভায় যোগ দিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ হেফাজত নেতাদের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, কোনো সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর বাড়াবাড়ি বরদাশত করবে না সরকার।

মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য হবে, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য প্রতিষ্ঠা হবে, কোনো অপশক্তি নেই এটাকে ঠেকানোর। ভাস্কর্য ইস্যুতে উলামা মাশায়েখের নাম দিয়ে কিছু লোক পরিস্থিতি উত্তপ্ত করছে বলে মন্তব্য করেন এই আওয়ামী লীগ নেতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *