প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ আয়োজন করছে এশিয়া প্যাসিফিক আইসিটি অ্যালায়েন্স (অ্যাপিকটা) এর কার্যনির্বাহী কমিটির সভা। রাজধানীর কাওরান বাজারে বেসিস কার্যালয়ে অ্যাপিকটার কার্যনির্বাহী কমিটির ৫১তম এই সভায় বাংলাদেশসহ সংগঠনটির ১২টি দেশের শীর্ষস্থানীয় ১৮ জন তথ্যপ্রযুক্তিবিদ অংশ নিয়েছেন। দু’দিনব্যাপি এই সভা শনিবার শেষ হবে।
শুক্রবার সকালে অ্যাপিকটার কার্যনির্বাহী কমিটির সভার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। বেসিস সভাপতি শামীম আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অ্যাপিকটার চেয়ারম্যান ড. দিলীপা ডি সিলভা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের পলিসি অ্যাডভাইজার আনীর চৌধুরী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বেসিসের সিনিয়র সহ-সভাপতি রাসেল টি আহমেদ।
Read More News
এবারের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় বাংলাদেশসহ অস্ট্রেলিয়া, চীন, চাইনিজ তাইপে, জাপান, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, সিঙ্গাপুর, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, হংকং ও ভিয়েতনামের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তিবিদগন অংশ নিয়েছেন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে বেসিসের সহ-সভাপতি এম রাশিদুল হাসান, মহাসচিব উত্তম কুমার পাল, যুগ্ম-মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, বেসিস আমাদের সক্রিয় অংশীদার। গত বছর এই সময়ে বেসিস অ্যাপিকটার সদস্যপদ লাভ করে। মাত্র এক বছরেই বাংলাদেশ অ্যাপিকটার নির্বাহী কমিটির সভার আয়োজক হতে পেরেছে। এটা নিঃসন্দেহে আনন্দের।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, বর্তমান সরকার ২০২১ সাল নাগাদ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার রূপকল্প নিয়ে কাজ করছে। এই সময়ের মধ্যে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি আয়ের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, যার লক্ষ্য শুধু ইউরোপ আমেরিকা নয়, বরং এশিয়ার দেশসমূহ বিশেষ করে অ্যাপিকটার সদস্য দেশগুলো থেকেও ৫০ ভাগ অর্জিত হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
সরকারের ইতোমধ্যে গৃহিত বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অর্জন তুলে ধরে তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের উৎকৃষ্ট সময়। বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর নাগরিক সেবার বিষয়টি অ্যাপিকটা দেশগুলোর জন্য একটি অনুসরণযোগ্য দৃষ্টান্ত হতে পারে।
শুধু বাংলাদেশেরই নয়, সামগ্রিকভাবে এশিয়ার তথ্যপ্রযুক্তি রোডম্যাপ বাস্তবায়নে অ্যাপিকটা দেশগুলো পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। পরিশেষে তিনি সকলকে আগামী অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৬ তে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানান।
অ্যাপিকটার চেয়ারম্যান ড. দিলীপা দি সিলভা বলেন, আমি মনেকরি সরকারের সাথে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের শীর্ষ সংগঠন বেসিস যেভাবে একাত্ম হয়ে কাজ করছে তা অ্যাপিকটা সদস্যদেশগুলোর প্রতিনিধিদের জন্য একটি অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পারে। তিনি অ্যাপিকটার ৫১তম কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের জন্য বাংলাদেশের আতিথেয়তার ভূয়ষী প্রশংসা করেন।
বেসিস সভাপতি শামীম আহসান বলেন, দেশে প্রথমবারের মতো অ্যাপিকটা ইভেন্ট আয়োজন করতে পেরে আমরা গর্বিত। বেসিস সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ ও এটুআই প্রকল্পের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করছে। জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালা প্রণয়ন, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায় ২০২৪ সাল পর্যন্ত আয়কর অব্যহতি প্রদান, বিশ্বব্যাংক ও এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং সরকারের উদ্যোগে দক্ষ জনবল তৈরিতে বিপুল অর্থ বরাদ্ধসহ ৫ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় নিশ্চিত করতে স্থানীয় বাজার উন্নয়নে অন্তত ২ বিলিয়ন ডলার অর্থ বিনিয়োগের লক্ষ্যে কাজ করছে।
এটিকার্ণির গ্লোবাল সার্ভিস লোকেশান ইনডেক্সের র্যাংকিংয়ে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ বিবেচনায় বাংলাদেশ বিশ্বের ২য় আইটি আউটসোর্সিং স্থান পেয়েছে। তিনি আরো উল্লেখ করেন, এশিয়ার বৃহত্তম আইটি প্ল্যাটফর্ম অ্যাপিকটার যেকোনো উদ্যোগ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার সার্বিক সহেযোগিতা দিতে প্রস্তুত আছে।
এটুআই প্রকল্পের পলিসি অ্যাডভাইজার আনীর চৌধুরী বলেন, ২০০৯ সালের পূর্বে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট রূপকল্প ছিল না। বর্তমান সরকারই প্রথম ২০২১ সাল নাগাদ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ রূপকল্প প্রণয়ন করে। তিনি আরো বলেন, সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে বিশ্বের বৃহত্তম ওয়েব পোর্টাল তৈরি করা হয়েছে যেখানে ৪৩০০০ সরকারি দফতরসমূহের ওয়েবসাইট সন্নিবেশিত হয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর জন্য ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করা গেছে।
বেসিসের সিনিয়র সহ-সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে চীন ও ভারতের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। বর্তমান সরকারসহ আইসিটি প্রতিমন্ত্রী আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছেন। তার নেতৃত্বেই আমাদের আইটি ইন্ডাস্ট্রি ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হবে বলে আমরা মনে করি।
উল্লেখ্য, এশিয়া প্যাসেফিক অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের তথ্যপ্রযুক্তি সংগঠনের এই জোট মূলত সদস্য দেশগুলোর পারষ্পারিক সহযোগিতার ভিত্তিতে নিজ নিজ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি সেক্টরের কাঠামো গঠন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ করে থাকে। এ ছাড়া সদস্য দেশগুলের নিজস্ব তথ্যপ্রযুক্তিকে বিশ্ববাজারে তুলে ধরা, তথ্যপ্রযুক্তির সক্ষমতা উন্নয়ন এবং প্রযুক্তি ইনোভেশনগুলোকে এগিয়ে নিতে বেশ শক্ত ভূমিকা রাখে এই জোট। বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের শীর্ষ সংগঠন হিসেবে গতবছর বেসিস অ্যাপিকটার সদস্যপদ লাভ করে।