ফরিদপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনকে আট সপ্তাহের জন্য আগাম জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। আজ মঙ্গলবার সংসদ সদস্যের আইনজীবীর আরজির পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানি শেষে তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন।
আদেশে আদালত বলেছেন, মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে সাক্ষীদের প্রভাবিত করা যাবে না। স্থানীয় প্রশাসনকে কোনো ধরনের ভয়ভীতি দেখানো যাবে না। মামলা তদন্তে তদন্ত কর্মকর্তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করবেন সংসদ সদস্য।
নিক্সন চৌধুরীর পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী শাহদীন মালিক। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী এম মনজুর আলম। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জান্নাতুল ফেরদৌসী।
দুপুর দেড়টায় জামিনের শুনানি শুরু হয়। শুনানিকালে নিক্সন চৌধুরী আদালতের এজলাসের সামনে দাঁড়ানো ছিলেন। এ সময় আদালতকক্ষে আইনজীবী ও সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
নিক্সন চৌধুরীর পক্ষে শুনানির শুরুতে তাঁর আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক আদালতে বলেন, ‘মাই লর্ড, আমার (মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন) বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লংঘনের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। অথচ মামলার এজাহারে তিনি কী অপরাধ করেছেন তার কোনো বিবরণ নেই। শুধু বলা হয়েছে, টেলিফোনে তিনি দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছেন এবং নির্বাচনী বিধিমালা ও নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন।’
ড. শাহদীন মালিক বলেন, মাই লর্ড, এখানে নিক্সন চৌধুরী একজন জাতীয় সংসদ সদস্য। তিনি দুইবার স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত। নির্বাচনের সময় বিজয়ের আনন্দ উল্লাস প্রকাশ করা হয়। নিক্সন চৌধুরী কোনো আচরণবিধি অমান্য করেন তাহলে তো সেটা একজন জেলা প্রশাসক সোস্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ কতে পারে না। এ ক্ষেত্রে স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হবে। কেননা সংবিধানে গোপনীয়তা রক্ষার জন্য বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসক আইন বহির্ভূতভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করে বাংলাদেশ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অপরাধ করেছেন।
এ সময় আদালত জানতে চান- ডিজিটাল আইনে মামলা হয়েছে? অপনারা কি শুধু আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগের বিষয়ে এসেছেন?
জবাবে ড. শাহদীন মালিক আদালতকে বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা এখনো হয়নি। তবে আমরা শুধু জামিনের জন্য এসেছি। কেননা, মামলার এজাহারে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো অভিযোগ নেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় এ বক্তব্য প্রচার করে জেলা প্রশাসক জ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছেন।
এ সময় আদালত জানতে চান? উনি কী স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য?
জবাবে ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘মাই লর্ড, নিক্সন চৌধুরী দুইবার স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত। তিনি প্রথমে ২০১৪ সালে, পরে ২০১৮ সালে নির্বাচিত হন।’
এ সময় ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘মাই লর্ড, নির্বাচন কমিশন এ মামলা দায়েরের মাধ্যমে নির্বাহী বিভাগ ও আইন বিভাগকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। যে কারণে এখন বিচার বিভাগের দ্বারস্থ হতে হয়েছে। এখানে আমরা শুধু বলব, যেহেতু একজন আইন প্রণেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। একজন ব্যক্তি যদি চুরি করে তাহলে সে কী কী চুরি করেছে তা মামলায় উল্লেখ করতে হয়। কিন্তু এখানে নিক্সন চৌধুরী কী অপরাধ করেছেন তা বলা হয়নি। তাই আমরা এ মুহূর্তে জামিন চাই।’
এরপর রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জান্নাতুল ফেরদৌসী আদালতকে বলেন, নিক্সন চৌধুরী একজন ভিআইপি ও সংসদ সদস্য। তিনি আইনপ্রণেতা হয়ে আইন লঙ্ঘন করেছেন। তাঁর মতো লোক যদি আইন লঙ্ঘন করেন তাহলে তাঁর মধ্যে আর সাধারণ মানুষের মধ্যে পার্থক্য কোথায়?
এ সময় আদালত বলেন, সংবিধানে প্রত্যেক মানুষের প্রাইভেসি রক্ষার কথা বলা হয়েছে। সংসদ সদস্যের প্রাইভেসি রক্ষার বিষয়ে আপনারা তো বৈধতার পরিচয় দেননি।
এর আগে আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে নিক্সন চৌধুরী জামিন নিতে হাইকোর্টে এসে পৌঁছান। সেসময় তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে করা মামলা আমি আইনিভাবে মোকাবিলা করব। আমার বক্তব্যের যে অডিও রেকর্ডিংটি প্রকাশ হয়েছে, সেটি সুপার এডিটেড। এটা অসত্য জিনিস, এটাকে এডিটিং করে বানানো হয়েছে। জেলা প্রশাসক কীভাবে এই ভিডিও প্রকাশ করেছেন, তাও খতিয়ে দেখা দরকার। আমার বক্তব্যের রেকর্ডিংটা, যতটুকু কথাই আছে, জেলা প্রশাসকের কাছেই আছে। উনার মাধ্যমে এটা কীভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় এলো, সেটারও বিচার হওয়া উচিত। আইসিটি অ্যাক্টে এটাও তো অপরাধ।